রিপোর্ট: নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশকাল: ২২ জুন ২০২৫ | সময়: দুপুর ১২:৩০
তেহরান-ওয়াশিংটন টানাপোড়েন আরও তীব্র, পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির মাত্র দুই দিনের মাথায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার রাতে এই হামলার ঘোষণা আসে। ট্রাম্প একে ‘খুবই সফল’ অভিযান হিসেবে উল্লেখ করলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের সংঘাতের দ্বার খুলে যেতে পারে।
সময়ের খেলায় ‘দুই সপ্তাহ’ রূপ নিল দুই দিনে
গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ইরানকে আলোচনায় বসার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেন, যার মধ্যেই পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালানোর হুমকি ছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহের পরিবর্তে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে অভিযান পরিচালিত হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি কৌশলী আশ্বাস ছিল, নাকি মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের আলোচনাই ব্যর্থ হয়েছে?
‘এটাই শান্তির সময়’: ট্রাম্পের মন্তব্যে বিতর্ক
হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, “এটাই শান্তির সময়।” তবে ইরান ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভূখণ্ডে হামলা চালালে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। বিশ্লেষকেরা ট্রাম্পের বক্তব্যকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন, নিছক রাজনৈতিক আশাবাদ হিসেবেই দেখছেন।
ফর্দোতে হামলা: ইরানের ‘পারমাণবিক শিরোমণি’ টার্গেটে
যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ এই কেন্দ্রটিতে আঘাত হানার অর্থ, ইরানের কৌশলগত সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করা—যা ভবিষ্যতে বড় প্রতিক্রিয়া আনতে পারে।
আলোচনা নাকি সংঘাত? দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন, ট্রাম্প বলেছেন, “নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।” তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ রাখার শর্তে ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তি করা হবে বলে জানান তিনি।
সমালোচনা ঘরে-বাইরে, ট্রাম্প চাপে
ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি রিপাবলিকান দলের অভ্যন্তরেও সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ শিবিরের অনেকে মনে করছেন, এই হামলা তাঁর নির্বাচনী বার্তার পরিপন্থী। কেননা, ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি এবং বরাবরই বৈদেশিক সংঘাতের বিরোধিতা করে এসেছেন।
ইসরায়েলি প্রভাব ও ওয়াশিংটনের প্রস্তুতি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল বহুদিন ধরেই চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিক। ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আরব সাগরে অবস্থান করছে মার্কিন রণতরী ও যুদ্ধজাহাজ। সব মিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা এখন সর্বোচ্চ চূড়ায়।
শেষ কথা: হামলার পর কী?
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা এককালীন সফল অভিযান হিসেবে চিত্রিত হলেও, ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এর প্রভাব এখনো অনিশ্চিত। হামলায় যদি কৌশলগতভাবে লক্ষ্য অর্জিত না হয়, তবে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত তাঁকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। নজর এখন তেহরানের দিকে—তারা প্রতিশোধ নেয় কি না, নাকি আলোচনায় বসে?
সূত্র: হোয়াইট হাউস ব্রিফিং, রয়টার্স, সিবিএস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, Truth Social, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মতামত।
ছবি: রয়টার্স স্যাটেলাইট চিত্র, ইরানের ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা (১৭ মে ২০২৫)