বৃহস্পতিবার, ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকা:

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নির্মমভাবে খুন হওয়া ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল প্রধান মোটিভ। এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বুধবার (১৬ জুলাই) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, “এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং ব্যক্তিগত প্রতিশোধপরায়ণতা থেকেই এই ঘটনা ঘটে।”

গ্রেপ্তার ৯ জন, ‘অভির আক্রোশ ছিল মারাত্মক’

নতুন করে পটুয়াখালী থেকে রেজওয়ান উদ্দিন অভি (৩৫) নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এই ঘটনায় মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল নয়জনে

গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন—
আলমগীর (২৮), মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২), মো. টিটন গাজী (৩২), মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১), তারেক রহমান রবিন (২২), নান্নু গাজী (২৫), সজীব বেপারী, রাজীব বেপারী এবং সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া রেজওয়ান উদ্দিন অভি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে সোহাগ তার ফুটপাথের দোকান দখল করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। সেই মোবাইলে অভির স্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভিডিও ছিল, যা দিয়ে সোহাগ তাকে ব্ল্যাকমেইল করত। এই অপমান সইতে না পেরে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেন।”

তিনি আরও বলেন, “সোহাগ ১৭ বছর ধরে এলাকায় একচেটিয়া ব্যবসা করতেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।”

হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা এবং ভিডিও প্রমাণ

গত বুধবার সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে মাথা ও শরীর থেঁতলে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন জানান, “হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শতাধিক ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই দুইজনকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়, যা আমাদের বড় সাফল্য।”

হত্যাকারীরা সোহাগের পরিচিত মুখ

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যেসব ব্যক্তি সোহাগকে হত্যা করেছে, তারা সবাই তার পূর্বপরিচিত। তাদের কয়েকজন আগে সোহাগের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল।

আইনি প্রক্রিয়া

এ ঘটনায় সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যেখানে মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কেউই আইনজীবী না থাকায় আদালত এক আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী।


বিশ্লেষণ:
এই হত্যা শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি নগরজীবনের নৈতিক অবক্ষয় এবং আইনের দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, প্রশ্ন উঠছে—এই রকম একটি ঘটনা কীভাবে দিনের আলোতে সংঘটিত হলো?


সূত্র: ডিএমপি সংবাদ সম্মেলন, পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যম রিপোর্ট
ছবি: সংগৃহীত / সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version