বৃহস্পতিবার, ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকা:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনায় প্রাথমিক অগ্রগতি হলেও ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত শর্তাবলি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের শেষ দিকে তৃতীয় দফার দর-কষাকষির জন্য আবারও ওয়াশিংটন যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল, যার নেতৃত্বে থাকবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

কৌশলগত চাপে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শর্ত

বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, বাংলাদেশ যেন চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে না পড়ে। একাধিক ব্যবসায়ী নেতা জানান, যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশ সামরিক খাতে মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়াক এবং চীনা বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি গ্রহণ কমাক।

তাদের আরও দাবি, আলোচনায় একটি স্পষ্ট শর্ত উঠে এসেছে— যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, বাংলাদেশকেও সেই শর্ত মেনে চলতে হবে। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হবে, তা যেন অন্য দেশ না পায়—এমন দাবিও রয়েছে তালিকায়।

বাণিজ্যিক প্রেক্ষাপট: শুল্ক আরোপ ও ঝুঁকি

৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করেন, যার মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫% বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও তা ৯ জুলাইয়ের পরিবর্তে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এই সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনায় বসছে, যাতে শুল্ক হার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা যায়।

গত ৯-১১ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন,

“আলোচনা উৎসাহব্যঞ্জক ছিল, আমরা তৃতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, যৌক্তিক ভিত্তিতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশের রপ্তানি চিত্র

২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ১৮%। এর মধ্যে ৮৫% পোশাকশিল্পভিত্তিক

ব্যবসায়ী মহলের উদ্বেগ

গত মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে মতবিনিময় করেন।

তিনি বলেন,

“এই শুল্ক আলোচনাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে বসার চেষ্টা করব, যাতে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করা যায়।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, প্রাণ-আরএফএল চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,

“ভারত ও ভিয়েতনামের কাছাকাছি শুল্কহার নির্ধারণ করতে পারলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় থাকবে। তবে আলোচনায় যেন এমন কিছু না হয়, যাতে দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”


বিশ্লেষণ: কূটনীতি বনাম অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ইস্যু এখন আর শুধু অর্থনীতির প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ভূরাজনৈতিক আনুগত্য ও কৌশলগত অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ— যুক্তরাষ্ট্রকে সন্তুষ্ট রাখা, আবার চীনের সঙ্গেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা।

১ আগস্টের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে হওয়া আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে গ্রহণযোগ্য সমাধান উঠে আসবে কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়।


সূত্র: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রথম আলো, ব্যবসায়ী সূত্র, রাজনৈতিক মহল
ছবি: সংগৃহীত

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version