বুধবার, ২৯শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন | ওয়াশিংটন–ব্রাসেলস | ২৮ জুলাই ২০২৫

বহুল প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। নতুন এই চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করবে, যা পূর্বে ঘোষিত ৩০ শতাংশ হারের তুলনায় অর্ধেক। ফলে, দুই মিত্রপক্ষের মধ্যে সম্ভাব্য একটি বড় বাণিজ্যযুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

গতকাল রোববার স্কটল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিলাসবহুল গলফ কোর্সে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের ভাষ্য: “সবচেয়ে বড় চুক্তি”

চুক্তি ঘোষণাকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চুক্তি।” তিনি জানান, ইউরোপ এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে।

ট্রাম্প দাবি করেন, “এই চুক্তি জাপানের সঙ্গে গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত ৫৫ হাজার কোটি ডলারের চুক্তিকেও ছাড়িয়ে গেছে।” তাঁর মতে, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন, যা এই চুক্তির মাধ্যমে বন্ধ হবে।

ভন ডার লেন: “স্থিতিশীলতা আনবে”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন চুক্তিটিকে “বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই চুক্তি শুধু বাণিজ্য নয়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনবে।”

চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি এবং শত শত কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনবে।

বড় কোম্পানিগুলোর জন্য সুসংবাদ

এই চুক্তি ইউরোপের কিছু বড় কোম্পানির জন্য আশার খবর হতে পারে—বিশেষত এয়ারবাস, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভো নরডিস্কের মতো কোম্পানিগুলোর জন্য। তবে ১৫ শতাংশ শুল্ককেও ইউরোপের অনেকেই প্রত্যাশার তুলনায় বেশি বলে মনে করছেন, কারণ ইউরোপের আশাবাদ ছিল—শুল্ক শূন্যে নামবে।

জার্মান প্রতিক্রিয়া

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “চুক্তিটি একটি সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধ রোধ করেছে। যুদ্ধ শুরু হলে জার্মানির রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, বিশেষ করে গাড়িশিল্প বড় ক্ষতির মুখে পড়ত।”

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ২৭.৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে, যা মার্সিডিজ, ভক্সওয়াগন ও বিএমডব্লিউর মতো জার্মান কোম্পানিগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

শুল্ক যুদ্ধ এড়ানো গেল

১২ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, ১ আগস্ট থেকে ইইউ পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হবে। জবাবে ইইউও ১০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছিল। শেষ মুহূর্তের চুক্তির মাধ্যমে দুই পক্ষই এই সংঘাত এড়াতে সক্ষম হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ—যাদের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হয়ে থাকে—তাদের মধ্যে এ ধরনের সমঝোতা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে।


তথ্যসূত্র: হোয়াইট হাউস, ইউরোপীয় কমিশন, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version