প্রকাশের তারিখ: ১৮ আগস্ট ২০২৫
সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কিছুটা হ্রাস ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধী দলের ভিন্নমত থাকায় সংস্কারের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমবে যেসব ক্ষেত্রে
-
মেয়াদ সীমা: কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন।
-
ইসি গঠন: নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে।
-
নিয়োগের সীমাবদ্ধতা: মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, আইন কমিশন ও প্রেস কাউন্সিলে সরাসরি নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
-
একাধিক পদে নিষেধাজ্ঞা: প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে একই সঙ্গে দলীয় প্রধান বা সংসদ নেতা হওয়া যাবে না।
-
জরুরি অবস্থা: জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত হবে। এখানে বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হবে।
-
সংসদীয় জবাবদিহি: চারটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দলের হাতে যাবে। এ ছাড়া সাংসদরা অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়বে যেসব ক্ষেত্রে
-
নিয়োগ ক্ষমতা: মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রেস কাউন্সিল, আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সরাসরি রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারবেন।
-
গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রস্তাব: সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান, ডিজিএফআই ও এনএসআই মহাপরিচালক, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। তবে এসব বিষয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের আপত্তি রয়েছে।
রাজনৈতিক ভিন্নমত
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর বেশ কিছুতে বিএনপি ও অন্যান্য দলের ভিন্নমত রয়ে গেছে। বিশেষ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত প্রবল। বিএনপির মতে, এসব সংস্কার কার্যকর হলে নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,
“সংবিধানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খানিকটা হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদ সীমা নির্ধারণ, নির্বাচন কমিশন গঠনে পরিবর্তন, সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলের ভূমিকা—এসবই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”
অন্যদিকে বিশ্লেষকদের মতে, প্রস্তাবগুলো পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় একটি ভারসাম্য তৈরি হবে। তবে বিরোধী দলগুলো ক্ষমতায় গেলে এসব সংস্কার কার্যকর করার নিশ্চয়তা এখনো স্পষ্ট নয়।
👉 এ সংস্কার প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত রূপ কতটা সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও পারস্পরিক আস্থার ওপর।