সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর লুটপাটে তিন স্তরের একটি বড় সিন্ডিকেট জড়িত বলে জানা গেছে। শ্রমিক থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্রাশার মেশিন মালিক পর্যন্ত এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক পদধারীরাও রয়েছেন। ইতোমধ্যে লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
তিন ধাপে লুটপাট
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রথম ধাপে শ্রমিক ও দিনমজুররা ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর চুরি করে নদীপাড়ের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করত।
-
নৌকাপ্রতি দাম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা
-
প্রতি বর্গফুট গড়ে ৮০-৯০ টাকা
দ্বিতীয় ধাপে নদীপাড়ের মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা সেই পাথর ক্রাশার মেশিন মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিত।
তৃতীয় ধাপে ক্রাশার মালিকরা প্রতি বর্গফুট ১১০ থেকে ১২৫ টাকায় কিনে মেশিনে ভেঙে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১১০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করত। এ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের অগ্রিম টাকা দেওয়া হতো এবং প্রভাবশালী মহলকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো।
রাজনৈতিক যোগসাজশ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ
গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক নেতাদের মদতে লুটপাট শুরু হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লুটপাটে জড়িতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, এখনো আনুষ্ঠানিক তালিকা তৈরি হয়নি।
যৌথ বাহিনীর অভিযান
যৌথ বাহিনী সাদাপাথর উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
-
সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট এলাকায় অন্তত ১১ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর জব্দ
-
চারজন আটক
-
সালুটিকর ভাটা এলাকায় ক্রাশার মেশিনের আঙিনায় মাটিচাপা অবস্থায় ১১ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার
জাফলংয়েও যৌথ বাহিনীর অভিযানে দেড় হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার ও ৫০টি নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। তবে জৈন্তাপুরের রাঙপানি এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এখনো লুটপাট অব্যাহত রয়েছে।
তদন্তের সময় বৃদ্ধি
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে বুধবার পর্যন্ত করা হয়েছে।
অস্ত্র ও মদসহ গ্রেপ্তার
টাস্কফোর্সের বিশেষ অভিযানে শনিবার দিবাগত রাতে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকায় পাথর ব্যবসায়ীদের বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র, ভারতীয় মদ ও এয়ারগান জব্দ করা হয়েছে। এ সময় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।