মঙ্গলবার, ৪ঠা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশের তারিখ: ১৮ আগস্ট ২০২৫

ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি না পেলেও কূটনীতির মঞ্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কার জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে তিনি রাশিয়াকে আবারও বিশ্বমঞ্চে বৈধতার আসনে বসাতে সক্ষম হয়েছেন।

বৈঠকের চিত্র

  • লাল গালিচায় পুতিনকে স্বাগত জানানোর সময় ট্রাম্প হাততালি দেন এবং তাঁকে প্রেসিডেন্টিয়াল গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন।

  • প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে উভয় নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে বড় কোনো ঘোষণা দেননি। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

  • পুতিন বৈঠকের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে ছিল বলে দাবি করেন এবং ট্রাম্পের প্রশংসা করেন ‘সংঘাতের ইতিহাস বোঝার চেষ্টা করছেন’ বলে।

আলোচনার মূল বিষয়

যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার দারচিভ জানান, ইউক্রেন ছাড়াও বৈঠকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে—

  1. বাইডেন প্রশাসনের সময় বাজেয়াপ্ত হওয়া রুশ কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া।

  2. যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু করা।

যুদ্ধবিরতি নয়, সংঘাত মীমাংসা

বৈঠকের আগে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কথা বললেও আলোচনার পর তিনি রাশিয়ার প্রস্তাবকেই প্রাধান্য দেন। তিনি জানান, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাকি রাশিয়ার সঙ্গে একটি “শান্তি চুক্তি” করার বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, ট্রাম্প রাশিয়ার ভূখণ্ড দখলের দাবি মেনে নেননি। ফলে বৈঠকটি ‘নতুন মিউনিখ’ হয়নি, যদিও আশঙ্কা রয়ে গেছে একটি ‘নতুন ইয়াল্টা’-র, যেখানে বড় শক্তিধর দেশগুলো ছোট দেশগুলোর ভাগ্য ঠিক করবে।

ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য সংকেত

  • ইউক্রেনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অপরিহার্য। ইউরোপ অর্থ সহায়তা দিলেও তাদের সামরিক সক্ষমতা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সমান নয়।

  • ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে পুতিনকে পছন্দ করেন এবং তাঁর শাসনপদ্ধতিকে আকর্ষণীয় মনে করেন। ফলে ইউক্রেনের স্বার্থে অবস্থান পাল্টানোর সম্ভাবনা কম।

  • তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন ও ইউরোপ চাইলে কৌশলগতভাবে ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে পারে—প্রশংসার মাধ্যমে, যেমনটা পুতিন করেছেন বৈঠকের পর।

ট্রাম্পের অগ্রাধিকার

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প ইউক্রেনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন—

  • মার্কিন জ্বালানি রপ্তানি,

  • চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা,

  • যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রাধান্য রক্ষা,

  • আর্কটিক অঞ্চলের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণে।

তাই আলাস্কায় বৈঠকের স্থান নির্বাচনও ছিল প্রতীকী।

বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস মনে করেন,

“পুতিনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু ভূখণ্ড নয়, বিশ্ব ব্যবস্থাকে নতুনভাবে সাজানোর সুযোগ। আর ট্রাম্পের কাছে এই যুদ্ধ কেবল একটি ঝামেলা। ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে বোঝাতে হবে—পুতিন আসলে মার্কিন স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।”


👉 যদিও আলাস্কার বৈঠককে “নতুন মিউনিখ” বলা যাচ্ছে না, তবে এর উত্তরাধিকার হতে পারে একটি “নতুন ইয়াল্টা”—যেখানে বড় শক্তিধর দেশগুলো ছোট দেশগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করবে তাদের অংশগ্রহণ ছাড়াই।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version