প্রকাশের তারিখ: রোববার, ১৮ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে বিদেশে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলার তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য উদঘাটন করা হয়।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানানো হয়।
অনুসন্ধানের মূল তথ্যসমূহ
-
এ পর্যন্ত বিদেশে ৩৪৬টি সম্পত্তি শনাক্ত করা হয়েছে, যা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্জিত।
-
নয়টি দেশে ৩৫২টি বিদেশি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে, যেগুলো বাংলাদেশিরা টাকার বিনিময়ে কিনেছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো হলো:
-
অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডা
-
অস্ট্রিয়া
-
ডমেনিকা
-
গ্রেনেডা
-
সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস
-
নর্থ মেসিডোনিয়া
-
মাল্টা
-
সেন্ট লুসিয়া
-
তুরস্ক
-
সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব জানান, দেশে বসেই তথ্য সংগ্রহের পর গোয়েন্দারা বিদেশে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, তা কেবল হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আরও বিপুল পরিমাণ তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে, যা উন্মোচনে সময় লাগবে।”
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেটাবেজ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের লোক বসিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলেছিল। তবে বর্তমানে সিআইসি সেই তথ্য উদ্ধারে সক্ষমতা অর্জন করেছে।
সরকারের অবস্থান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অর্থপাচারকে ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা হিসেবে দেখতে হবে। তিনি নির্দেশনা দেন—
-
সিআইসি, দুদক, পুলিশ সিআইডি ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
-
বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
-
যারা দেশের সম্পদ লুট করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর দেশ বিনির্মাণ করতে হলে এই লুটেরাদের প্রকাশ্যে আনতে হবে। জাতির সামনে দেখাতে হবে, কীভাবে কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেছে।”
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
সিআইসি জানিয়েছে, অন্তত ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
🔎 বিশ্লেষণ: এ অনুসন্ধান যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে এটি হবে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।