প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা:
রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমীকে একটি সতর্কতামূলক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অভিযোগ ছিল—তিনি জুমার খুতবায় জামায়াতবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তবে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুমার নামাজের আগে মিম্বারে বসেই সেই চিঠি প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করে নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলেন খতিব।
🔹 চিঠি ও অভিযোগ
গত ১৬ অক্টোবর উত্তরা পশ্চিম থানা জামায়াতে ইসলামী দপ্তর সম্পাদক জি. এম. আসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিটি শুক্রবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে উল্লেখ করা হয়,
“বায়তুন নূর জামে মসজিদ অত্র এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি মসজিদ, যেখানে বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করেন। কিন্তু গত ১০ অক্টোবর খুতবায় খতিব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন।”
চিঠিতে আরও দাবি করা হয়, ওই বক্তব্য রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ও উসকানিমূলক, যা সমাজে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। তাই বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির দায়ভার খতিব ও মসজিদ কমিটিকে নিতে হবে বলেও সতর্ক করা হয়।
🔹 খতিবের প্রতিক্রিয়া
জুমার নামাজের আগে মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী মিম্বারে বসে বলেন,
“রোজা আর পূজা এক নয়। আমি আগেও বলেছি, আজ আবারও বলছি—আপনারা সংযত হোন, সংশোধন হোন, তাওবা পড়ুন।”
এরপর তিনি মুসল্লিদের সামনে জামায়াতের পাঠানো চিঠিটি তুলে ধরে ঘোষণা দেন,
“আমি এই চিঠি মানছি না।”
পরে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে চিঠিটি নিজ হাতে ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। এ সময় মসজিদে উপস্থিত মুসল্লি ও কমিটির সদস্যরা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দেন।
🔹 চিঠির অন্যান্য অংশ
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, একজন নাগরিক হিসেবে খতিব যে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস রাখতে পারেন, তবে মসজিদের মিম্বার থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া অনুচিত।
মসজিদে বিভিন্ন মত ও দলের মানুষ নামাজ আদায় করেন—তাই সেখানে রাজনৈতিক প্রচারণা পরিহার করা উচিত।
একই সঙ্গে মসজিদ কমিটিকে আহ্বান জানানো হয় যেন সব মতের মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন এবং পক্ষপাতমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
🔹 প্রশাসনের উদ্দেশে অনুলিপি প্রেরণ
চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে—
- 
ডিয়ারাবাড়ী আর্মি ক্যাম্প, উত্তরা,
 - 
উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি), উত্তরা বিভাগ,
 - 
অফিসার ইনচার্জ, উত্তরা পশ্চিম থানা,
 - 
১২ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর কাছে।
 
উপসংহার:
ঘটনাটি উত্তরায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় মঞ্চে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বনাম ধর্মীয় স্বাধীনতা—এই বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।

