মঙ্গলবার, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চীনের পণ্যের ওপর একের পর এক শুল্ক আরোপ করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চীনা পণ্যে শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ১৪৫ শতাংশে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বিশ্বব্যাপী এ বাণিজ্যযুদ্ধ শুধু দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির নয়, এর প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যে—যা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য আনতে পারে অভাবনীয় সম্ভাবনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে চীনা পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ব্যাহত হবে। ফলে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প উৎস খুঁজবে এবং তাদের নজর যাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ পেতে পারে নতুন বিনিয়োগ ও বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আদেশ।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার জানালা

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)-এর চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক বলেন, “বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে স্বল্প মেয়াদে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যেতে পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য এটি হতে পারে সোনালি সময়। কারণ, চীন থেকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ উভয়ই সরবে।”

তিনি আরও বলেন, “চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যতই দর-কষাকষি করুক না কেন, অতিরিক্ত শুল্ক সহজে প্রত্যাহার হবে না। ফলে চীনা রপ্তানিকারকেরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে।”

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৮৭ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। চীন ও ভিয়েতনামের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ।

টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, “চীনের বাজার হারানোর সুযোগ অন্যরাও নেবে, তবে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি। সময়মতো প্রস্তুতি নিলে অন্তত ১০ বছরের সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।”

ক্রেতাদের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশে

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, “চীনের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসায় মার্কিন ক্রেতারা এখন সরিয়ে নিতে চাচ্ছে তাদের ক্রয়াদেশ। আমাদের ইমেইলে এখন ক্রয়সংক্রান্ত অনুসন্ধান বাড়ছে। বিশেষ করে চীনের তৈরি পোশাক এখন আর লাভজনক নয় মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য।”

বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে

যদিও চীন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং সেখানকার বাজারে কমদামে পণ্য অফার করছে। চীনা সরকার প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে রপ্তানিতে, যার ফলে ইইউ বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, “চীনের উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে হলে আমাদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশেষায়িত পোশাক, কৃত্রিম তন্তু, জুতা, খেলনা, ইলেকট্রনিকস—এই খাতগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।”

বিনিয়োগ টানার প্রস্তুতি জরুরি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের ব্যবসা ধরতে হলে বাংলাদেশকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণ, শুল্ক কাঠামো হালনাগাদ, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নেও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যে ন্যূনতম পাল্টা শুল্ক হ্রাসের জন্যও উদ্যোগ নিতে হবে, বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version