প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক
ঢাকা, ২১ মে ২০২৫
আলোচিত কণ্ঠশিল্পী মাঈনুল আহসান নোবেল আবারও চাঞ্চল্যকর অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, এক কলেজছাত্রীকে দীর্ঘ সাত মাস ধরে আটকে রেখে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের। অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ মে রাতে রাজধানীর ডেমরা থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, রাজধানীর গুলশানে দেখা করার কথা বলে নোবেল ওই ছাত্রীকে ডেকে আনেন। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাঁকে ডেমরার একটি বাসায় আটকে রাখেন। এই সময়ে তাঁকে নিয়মিত ধর্ষণ ও নির্যাতন করেন এবং ঘটনার ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করেন। পুলিশের অভিযানে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয় এবং বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, নোবেল পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সে উদ্দেশ্যে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন। তবে পুলিশের অভিযানে এর আগেই তাঁকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা হয়েছে।
অতীতেও বিতর্কিত ছিলেন নোবেল
নোবেলের সংগীত জীবনের শুরুটা হয়েছিল সম্ভাবনায় ভরপুর। ভারতের জি বাংলার ‘সারেগামাপা’তে অংশ নিয়ে তিনি রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান। কিন্তু সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। বরং একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে তাঁর নাম উঠে এসেছে সংবাদের শিরোনামে।
২০১৯ সালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রথম মামলা হয়। একই বছর তিনি সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করেন, তবে পরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তাঁদের দাম্পত্য কলহ, সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস ও একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও গণমাধ্যমে আসে। ২০২৩ সালে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগে তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মাদকাসক্তি, কনসার্ট কেলেঙ্কারি ও ফেসবুক বিতর্ক
নোবেলের বিরুদ্ধে একাধিকবার মদ্যপ অবস্থায় কনসার্টে ওঠার অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল কুড়িগ্রামের একটি কনসার্টে মদ্যপ অবস্থায় অংশ নিয়ে দর্শকদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। এছাড়া জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জেমস এবং সংগীত পরিচালক ইথুন বাবুকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করে বেশ কয়েকবার মামলার সম্মুখীন হন। ২০২১ সালে সাংবাদিককে অপহরণের হুমকি দিয়ে সমালোচিত হন, যার জের ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি তাঁকে সতর্ক করে বিবৃতি দেয়।
বিচিত্র ব্যক্তিগত জীবন
সাবেক স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের পাশাপাশি একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন ছিল নোবেলকে ঘিরে। ২০২৩ সালে তিনি ফুড ব্লগার ফারজানা আরশিকে বিয়ে করেন বলেও দাবি করেন, তবে সেই বিয়েও অল্প কিছু দিনের মধ্যে ভেঙে যায়। সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের ঘনিষ্ঠ ছবি পোস্টের পর নতুন করে বিতর্কে জড়ান তিনি।
আইনজীবীর দাবি ও সমাজ বিশেষজ্ঞের মতামত
নোবেলের আইনজীবী মো. জসিমউদ্দীন বলেন, মামলার বাদী আসলে তাঁর বৈধ স্ত্রী এবং চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পারিবারিক ভুল–বোঝাবুঝি থেকেই মামলা হতে পারে। তবে আসামি সংসার করতে আগ্রহী।
এদিকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবন, মাদকাসক্তি এবং সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার একজন মেধাবী শিল্পীকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে। সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো শক্ত না থাকলে একজন মানুষের মানসিক বিপর্যয় খুব সহজেই ঘটতে পারে।
শেষ কথা
নোবেল একসময় ছিলেন বাংলাদেশের তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন ও আচরণগত বিচ্যুতির কারণে আজ তিনি আইনের কাঠগড়ায়। তাঁর জীবনের এই বিপর্যয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য বড় এক সতর্কবার্তা। জীবনের গতি শুধুই প্রতিভায় নয়, নিয়ন্ত্রিত আচরণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হয়।