নগর ভবনের কার্যক্রম ১০ দিন ধরে বন্ধ, সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না করানোর প্রতিবাদে টানা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থক ও করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ আন্দোলনের ফলে টানা ১০ দিন ধরে নগর ভবনের কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।
রোববার সকাল ১০টার পর থেকে নগর ভবন প্রাঙ্গণে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাদের ‘মেয়র ছাড়া নগর ভবন চলতে পারে না’—এমন স্লোগান দিতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীদের দাবি, আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়িয়ে দ্রুত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
অংশগ্রহণকারী কর্মচারী মুনীর হোসেন বলেন, “আমরা চাই ইশরাক হোসেনের শপথ অনুষ্ঠান করে তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হোক। তিনি চেয়ারে বসলেই আমরা বাড়ি ফিরব। তার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
অন্যদিকে, আন্দোলনের কারণে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম বলেন, “আমাদের কারণে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে না। বরং যারা নিয়ম মেনে দায়িত্ব দিচ্ছে না, তাদের কারণেই এই পরিস্থিতি। দায় তাদেরই।”
ডিএসসিসির কর্মচারী আফরোজা হক বলেন, “আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা শুধু আমাদের চাওয়া না, ঢাকাবাসীর চাওয়া। সরকার শপথ পড়ালেই আমরা কাজে ফিরব।”
এ অবস্থায় নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ প্রায় সব প্রবেশপথ তালাবদ্ধ। সীমিত একটি গেট দিয়ে কেউ কেউ প্রবেশ করতে পারলেও ফিরে যাচ্ছেন অধিকাংশ সেবা প্রত্যাশী। অঞ্চল-১ ও অঞ্চল-৪ সহ সব কার্যালয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কার্যালয়ও ১৫ মে থেকে বন্ধ রয়েছে।
ওয়ারী থেকে আসা এক সেবা প্রত্যাশী সালাহউদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মেয়ের জন্মনিবন্ধনের ছোট একটা কাজ। কয়েকদিন ধরে ঘুরছি, অফিসই খুলছে না।”
এর আগে গত ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে শেখ ফজলে নূর তাপসের বিজয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করলেও এখনো তার শপথ অনুষ্ঠিত হয়নি।
১৪ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন, যাতে ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়। তবে আদালত রিট খারিজ করে দেয়। এরপরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ‘আইনি জটিলতা’ দেখিয়ে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে বিরত রয়েছে।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বৃহস্পতিবার আন্দোলন সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ২৪-৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের জন্য। তবে কোনো অগ্রগতি না থাকায় শনিবার থেকে আন্দোলন ফের শুরু হয়েছে।
নগর ভবনের এই অচলাবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে প্রতিদিন। দ্রুত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমাধান না হলে সংকট আরও গভীর হতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।