মঙ্গলবার, ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫:

দেশ এক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে—এটাই যেন এখনকার বাস্তবতা। প্রশাসন, রাজনীতি, নাগরিক সেবা—সবখানেই চলছে অচলাবস্থা, সংকট এবং প্রশ্নবিদ্ধ নেতৃত্বের ছায়া। এমন প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও প্রত্যাশা।

গত কয়েক মাসের সংবাদপত্রের শিরোনামগুলিই যেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, এনবিআরের অচলাবস্থা, সিটি করপোরেশনের বিক্ষোভ, রাজনীতিতে মতপার্থক্য, সর্বোপরি জাতীয় নির্বাচনের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে দেশের মানুষ এক অনির্ধারিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথের দাবিতে চলমান আন্দোলনও এখন জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ১৪ মে থেকে চলমান এ কর্মসূচি ডিএসসিসির কার্যক্রম প্রায় অচল করে দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হোক। তারা বলছে, “মেয়র ছাড়া নগর ভবন চলতে পারে না।”

অন্যদিকে, চলমান রাজনৈতিক সংলাপেও মিলছে না কোনো আশার বাণী। দুই মাসে ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ বলছেন, “দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এতটাই মৌলিক যে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন।” বিরোধীদলগুলোর মূল দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক, আদর্শগত নয়।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস? শুরুতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এমনকি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদও স্বীকার করেছেন, “সংস্কারের তেমন কিছু হয়নি।”

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব নিয়ে জনমনে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। একদিকে তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও প্রত্যাশা বিরাজমান, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক সংকট ও প্রশাসনিক স্থবিরতার মাঝে কার্যকর নেতৃত্বের অভাব। এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে যে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন, যদিও উপদেষ্টা পরিষদ তা অস্বীকার করেছে।

সামরিক বাহিনীর স্টাফপ্রধান জেনারেল ওয়াকার সম্প্রতি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। অথচ সরকার এখনো নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ স্পষ্টভাবে দেয়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো উদ্বেগ জানালেও প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নেই কোনো নির্দিষ্ট আশ্বাস।

এই প্রেক্ষাপটে অনেকে মনে করছেন, ইশরাক হোসেনের আন্দোলন একদিকে যেমন স্থানীয় সরকারের জটিলতা তুলে ধরছে, অন্যদিকে তা বিএনপির রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। আন্দোলনে বিএনপির সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করছে যে দলটি এখনো দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি।

শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নগুলোই এখন মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে—সংস্কার আগে, না নির্বাচন? সিদ্ধান্ত কি রাজনৈতিক শক্তি দিয়ে হবে, না গুণগত বিবেচনায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় এসেছে আন্তরিক রাজনৈতিক সংলাপের। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া—তাকে থামিয়ে রেখে জাতীয় নির্বাচন অনিশ্চিত করে রাখা বাস্তবসম্মত নয়। এই মুহূর্তে দেশের মানুষ চায় একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ, নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা এবং সংকটের নিরসন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস হয়তো রাজনীতিকে পছন্দ করেন না, তবে এই মুহূর্তে তাঁর হাতে রয়েছে ইতিহাস গড়ার দায়িত্ব। হয়তো সবকিছু করা সম্ভব নয়, কিন্তু ন্যূনতম দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েও তিনি জাতির আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে পারেন।


সংগৃহীত ও সম্পাদিত: প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version