শনিবার, ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

📍 ঢাকা, ২৬ মে ২০২৫

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের একাধিক সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, তাই বিষয়টি ‘প্রিম্যাচিউর’।

বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন।

আইনজীবী রওশন আলী গত ৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দাখিল করেন। আবেদনে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না করতে অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। পাশাপাশি, একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও দাবি জানানো হয়—যারা ধর্মীয় ও পারিবারিক আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেবে।

রিটে অভিযোগ করা হয়, কমিশনের সুপারিশসমূহ ইসলামী শরিয়ত, সংবিধান ও দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। বিশেষভাবে উত্তরাধিকার আইনে নারী-পুরুষের সমান অধিকার এবং বহুবিবাহ নিষিদ্ধের প্রস্তাব ধর্মীয় অনুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে রিটে উল্লেখ করা হয়।

রিটে আরও দাবি করা হয়, ‘মাই বডি, মাই চয়েস’ স্লোগানের অন্ধ অনুসরণ এবং যৌনকর্মী পেশাকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব সামাজিক নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করেছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ:

আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো এখনো সরকারের নীতিগত বা আইনগত সিদ্ধান্তে রূপ নেয়নি। কাজেই রিটটি আগাম ও অপ্রয়োজনীয় (premature) এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়।


নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক

২০২৪ সালের নভেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করে, যার কাজ শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে। ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর কাছে জমা দেওয়া ৩১৮ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৪৩৩টি সুপারিশ করা হয়। কমিশনের মেয়াদ ৩০ এপ্রিল শেষ হলেও তা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • সব ধর্মের নারীর জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন।

  • নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অধিকার

  • সংসদে ৩০০ নারী আসন সংরক্ষণসহ ৬০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন

  • বিয়ের মধ্যে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা।

  • যৌনকর্মীদের শ্রম অধিকার নিশ্চিতকরণ।

ধর্মভিত্তিক দলের প্রতিক্রিয়া

প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই ধর্মভিত্তিক দলগুলো এর কড়া বিরোধিতা করছে।

  • হেফাজতে ইসলাম কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

  • জামায়াতে ইসলামী সুপারিশগুলোকে ‘গর্হিত’ বলে অভিহিত করেছে।

  • তরুণদের দল এনসিপি অভিযোগ করেছে, সমাজের সব শ্রেণির নারীর অন্তর্ভুক্তি হয়নি।

উপসংহার

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হাইকোর্ট আপাতত কোনো আইনি হস্তক্ষেপ করছে না। তবে এই কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক আরও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরে নির্বাচিত সরকার এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে হাঁটে কি না।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version