ঢাকা, ৩১ মে ২০২৫
জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় বিএনপি সরকারকে অবস্থান পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। দলটি এক মাস সময় দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে, এই সময়ে কোনো বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। তবে জুলাই মাসে পরিস্থিতির অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে মাঠে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। তারা মনে করেন, এই সময়ের মধ্যে যদি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ না করে, তবে দলটি কঠোর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করব। আমরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করব, যাতে সরকারের বিবেচনাবোধ জাগে।”
গত ২৯ মে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত বিএনপির বড় সমাবেশে দলের নেতা তারেক রহমান কঠোর ভাষায় জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে—এর বাইরে বিএনপি কোনো বিকল্প ভাবছে না।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন হবে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ সালের মধ্যে। সম্প্রতি টোকিওর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সব দল নয়, কেবল একটি দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার ও বিএনপি বর্তমানে নির্বাচনকালীন সময় নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, “বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে সরবে না। কারণ এতে দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। অন্যদিকে অধ্যাপক ইউনূস শুধু নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চান না, বরং ন্যূনতম সংস্কার করেই তিনি নির্বাচনের পথে যেতে চান।”
এদিকে, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ওই দিনটিকে কেন্দ্র করেও বড় কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের জন্য আমাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে। সামনে আরও কর্মসূচি থাকবে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তিতে অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।”
সার্বিক বিবেচনায়, রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আগামী জুলাই-আগস্ট মাস দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল হয়ে উঠতে যাচ্ছে। নির্বাচনকাল ও তার রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, কর্মসূচি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত—সব কিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য অপেক্ষমাণ সময়ের দিকে তাকিয়ে আছে দেশ।