প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক | ২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির’ অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন কোনো সমীক্ষা ছাড়াই একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় দেড় লাখ নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) টেন্ডার ছাড়াই এবং বাজার মূল্যের চেয়ে ১০ গুণ বেশি দামে কেনা হয়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকা।
এছাড়া ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ভোট কারচুপি, আগের রাতে ভোট সম্পন্ন, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করা এবং নির্বাচনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ফলাফল নিয়ন্ত্রণের অভিযোগেও অনুসন্ধান চলছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানান, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছু অনুসন্ধান ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড ইতোমধ্যে হাতে এসেছে। বাকি নথিপত্র সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। এরপর কমিশন পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
এই মামলায় নূরুল হুদার পাশাপাশি তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এবং অন্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করেছিলেন।
কে এম নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনেই ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৭টি আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। অন্যদিকে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী জোট মাত্র সাতটি আসন পায়।
নির্বাচনের আগে রাতেই ভোট গ্রহণের অভিযোগে ওই নির্বাচনকে ‘নিশি রাতের নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যা দেয় বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনের সাবেক সদস্য মাহবুব তালুকদারও বিদায়বেলায় স্বীকার করেন যে, “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি।” তিনি আরও জানান, ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছিল, যা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
এ নির্বাচন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ পরে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এর পরবর্তী তিনটি নির্বাচনই দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, যা নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়।
শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এর পর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আংশিক বাতিল করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার পথ উন্মুক্ত করে দেয়। রায়ে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনেই অবাধ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হওয়ায় জনগণের আস্থা ধ্বংস হয়েছে।”
সূত্র: দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, হাইকোর্ট রায়, সংবাদ সংস্থা