আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ইউক্রেনকে নতুন অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
সোমবার (১৪ জুলাই) ওভাল অফিসে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন,
“আমি পুতিনের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তিনি যুদ্ধ থামাতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময় দিচ্ছি—এর মধ্যে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। নইলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শুল্ক-নির্ভর অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা।”
দ্বিতীয় স্তরের শুল্কে ঝুঁকিতে রাশিয়ার অংশীদাররাও
ট্রাম্প জানান, চুক্তি ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় ধাপের শুল্ক আরোপ করা হবে, যা শুধুমাত্র রাশিয়ার ওপর নয়, বরং দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার যেমন চীন, ভারত, তুরস্ক ও বেলারুশের ওপরও কার্যকর হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা তৈরি করবে।
রাশিয়ার সর্বশেষ কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন (৩৪%), এরপর রয়েছে ভারত, তুরস্ক ও বেলারুশ। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর এই দেশগুলোও কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ন্যাটোর সঙ্গে সমন্বয়ে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তি
এই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ও ন্যাটো মহাসচিব রুট একযোগে ইউক্রেনের জন্য নতুন সামরিক সহযোগিতা ঘোষণা করেন। চুক্তির আওতায় ন্যাটো সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে এবং তা ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,
“আমার দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল—ন্যাটো ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমান ত্যাগ করছে না। আজকের চুক্তির মাধ্যমে সেই ভারসাম্য কিছুটা ফিরল।”
পুতিনের প্রতি কড়া বার্তা
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই অবস্থান যুদ্ধ-প্রস্তুতিরই অংশ। ন্যাটো মহাসচিব রুটও প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন,
“যদি আমি পুতিনের জায়গায় থাকতাম এবং এই প্রেস ব্রিফিং শুনতাম, তাহলে বিষয়টি নতুন করে চিন্তা করতাম। ট্রাম্প এবার সত্যিই কড়া বার্তা দিয়েছেন।”
কৃতজ্ঞ ইউক্রেন, প্রস্তুত রাশিয়া?
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন,
“নতুন অস্ত্রচুক্তি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে। আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের পাশে থাকার অঙ্গীকারকে স্বাগত জানাই।”
অন্যদিকে, ক্রেমলিন এখনও ট্রাম্পের বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, মস্কো বিষয়টিকে ‘চরম উত্তেজনামূলক ও একতরফা হুমকি’ হিসেবে দেখছে।
📌 বিশ্লেষণ: ট্রাম্পের আল্টিমেটাম একদিকে যেমন রাশিয়ার ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করবে, অন্যদিকে সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়াবে। এখন দেখার বিষয়—পুতিন এই সময়সীমার মধ্যে সাড়া দেন কি না, না হলে নতুন এক সংঘাতময় অধ্যায় শুরু হয় কিনা।
✍️ সংবাদ বিভাগ | প্রবাস বুলেটিন
📩 আপনার মতামত বা প্রতিক্রিয়া পাঠান: news@probashbulletin.com