শুক্রবার, ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ওয়াশিংটন, ৮ জুলাই ২০২৫:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার (স্থানীয় সময় দুপুরে) ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ একগুচ্ছ কঠোর ভাষার চিঠি প্রকাশ করে জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে আমদানি শুল্ক আরোপ করবে।

এই ঘোষণার পরপরই নিউইয়র্কের প্রধান পুঁজিবাজারে বড় ধস নামে। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ডাও জোন্স সূচক ৪২২ পয়েন্ট পড়ে যায়। নাসডাক কমেছে ০.৯২ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ০.৭৯ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পতনের পেছনে মূলত ট্রাম্পের ‘শুল্ক চিঠি’ এবং তার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা দায়ী।

বিশ্বখ্যাত কোম্পানি টয়োটা, নিসান, হোন্ডা, এলজি ও এসকে টেলিকমের শেয়ারের দাম দ্রুত পড়ে যায়। কিছু কোম্পানির শেয়ারমূল্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালিত শেয়ারভিত্তিক তহবিলগুলোর মূল্য ২ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

বাজারে আতঙ্ক, বিনিয়োগকারীরা সতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ কৌশলবিদ রস মেফিল্ড সিএনএনকে বলেন, “প্রস্তাবিত শুল্কের হার বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হওয়ায় ব্যাপক বিক্রি শুরু হয়েছে।”

এর প্রভাব শুধু শেয়ারবাজারেই নয়, বন্ড মার্কেটেও পড়েছে। ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৩৯ শতাংশ, এবং ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ বেড়ে হয়েছে ৪.৯২ শতাংশ। সুদের হার বাড়ায় বন্ডের মূল্য কমে গেছে।

অন্যদিকে ডলারের মান কিছুটা বেড়েছে। ইউএস ডলার ইনডেক্স ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানি ইয়েন, দক্ষিণ কোরীয় ওয়ান ও দক্ষিণ আফ্রিকান র‍্যান্ডের মতো মুদ্রাগুলো ডলারের তুলনায় দুর্বল হয়েছে।

আশাবাদ ও আত্মতুষ্টির দ্বন্দ্ব
যদিও আজ মঙ্গলবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলোতে চাঙাভাব দেখা গেছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব বিভক্ত। কেউ কেউ মনে করছেন, বিভ্রান্তির সবচেয়ে খারাপ সময় পার হয়ে গেছে। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন বাজারে ‘আত্মতুষ্টি’ কাজ করছে।

ওয়েলস ফারগো ইনভেস্টমেন্ট ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক স্কট রেন বলেন, “শুল্ক পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট অতিমাত্রায় আশাবাদী। তবে দীর্ঘমেয়াদে শুল্ক আরোপ ভোক্তা ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে, যা অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।”

অর্থনীতিতে আস্থার সংকট
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ট্রাম্পের খেয়ালিপনার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ১৯৭৩ সালের পর চলতি বছর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন সেই অনিশ্চয়তারই প্রতিচ্ছবি।

জেফরিসে ইউরোপের প্রধান কৌশলবিদ মোহিত কুমার মনে করেন, এই মুহূর্তে পরিস্থিতিকে দাম পড়ে যাওয়া শেয়ার কেনার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। তবে তিনি স্বীকার করেন, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা পর্যন্ত অনিশ্চয়তা বজায় থাকবে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি সই হতে পারে। কিন্তু তেমন কিছু না হলে ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে নতুন শুল্কহার।

বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো যত দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে হবে, ততই শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু যদি চুক্তি না হয়, তবে শুল্কের বোঝা ভোক্তা থেকে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে—এ বিষয়ে একমত অধিকাংশ পর্যবেক্ষক।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version