শুক্রবার, ৩রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫:

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে গত বছরের ৮ জুলাই দেশজুড়ে একযোগে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলনে মুহূর্তেই অচল হয়ে পড়ে সড়ক, মহাসড়ক ও রেল যোগাযোগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সড়ক ও রেল অবরোধে অংশ নেন।

রাজধানী ঢাকায় অবরোধে স্থবিরতা
সেদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয় মিছিল, যা শাহবাগ মোড় অবরোধের মধ্য দিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফার্মগেট, আগারগাঁও, কাওরান বাজার, গুলিস্তান, মিন্টো রোড, নীলক্ষেত, চানখাঁরপুলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেও ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে।

ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, হোম ইকোনমিক্স কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও নিজ নিজ এলাকা অবরোধে অংশ নেন। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত গান, কবিতা ও বক্তৃতায় উত্তাল ছিল রাজপথ।

শক্ত ভাষায় হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের
আন্দোলনের অন্যতম মুখ হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ছাত্রদের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তার দায় আপনাদের নিতে হবে। আমরা থাকব রাস্তায়, আপনারা থাকবেন এসি রুমে—তা হবে না।”

শিক্ষার্থী সার্জিস আলম বলেন, “বাংলাদেশ ভেবেছিল ছাত্রসমাজ ঘুমিয়ে পড়েছে। আমরা জেগে আছি, এবং বারবার জাগব। শিক্ষামন্ত্রী কোটার প্রতি দরদ দেখাচ্ছেন, আমরা প্রশ্ন করতে চাই—আপনি কি কোটার প্রডাক্ট?”

ঢাকার বাইরে সাড়া দেয় সারাদেশ
🔸 চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। কক্সবাজার-ঢাকা ট্রেন আটকা পড়ে।
🔸 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: কৃষি অনুষদসংলগ্ন রেললাইন অবরোধে ৫টি ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যস্ত হয়।
🔸 রংপুর: মডার্ন মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ছয় জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
🔸 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা; চলে কবিতা আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশনা।
🔸 কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
🔸 বিইউপি: মিরপুর ১২ নম্বর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে কয়েকশ শিক্ষার্থী।

৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন
আন্দোলনকে কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত করতে গঠন করা হয় ৬৫ সদস্যের একটি সমন্বয়ক টিম। ঢাবির চার শিক্ষার্থী—নাহিদ ইসলাম (সমাজবিজ্ঞান), হাসনাত আবদুল্লাহ (ইংরেজি), সার্জিস আলম (প্রাণিবিদ্যা), আসিফ মাহমুদ (ভাষাবিজ্ঞান)—এই আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আন্দোলনের বার্তা ছিল স্পষ্ট
‘কোটা প্রথা বাতিল চাই’, ‘আমার দেশ আমার মা, কোটা বৈষম্য মানব না’—এমন সব স্লোগানে মুখর ছিল রাজপথ। আন্দোলনকারীরা সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন—তাদের দাবির প্রতি অবহেলা করলে ফের রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version